ভিয়েতনাম ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫- বিস্তারিত তথ্য

বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন এখন অনেক পরিবারের বেঁচে থাকার একটা রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি একটা ভয়ও কাজ করে। প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা, ভুল তথ্য, অথবা এমন দেশে পা রাখা যেখানে ভবিষ্যৎটা অন্ধকার।
অনেকে ইউরোপ, সৌদি আরব, মালয়েশিয়ার মতো দেশের কথা ভাবেন। কিন্তু “ভিয়েতনাম” শব্দটা শুনলেই কিছুটা দ্বিধা তৈরি হয়। ভিয়েতনামে কি সত্যিই কাজ আছে? ওটা কি নিরাপদ?

বাস্তবতা হলো, ভিয়েতনাম এখন সেই হাতে গোনা কিছু দেশের মধ্যে একটি, যেখানে কম খরচে, নিয়ম মেনে, বৈধ উপায়ে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন শত শত বাংলাদেশি সেখানে যাচ্ছেন I কেউ আগেই গেছেন এবং ভালো অবস্থানে আছেন, কেওবা ভুল এজেন্সির খপ্পরে পড়ে বিপদে পড়েছেন। এই লেখায় আমরা বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে জানবো ভিয়েতনাম ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কী ,কীভাবে পাওয়া যায়, খরচ কত, কোথায় কাজ হয়, এবং একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আপনার জন্য এটি কি আদৌ উপযুক্ত একটি সুযোগ হতে পারে?

ভিয়েতনাম কেন এখন বিদেশে যাওয়ার জন্য ভালো অপশন?

ভিয়েতনাম কেন এখন বিদেশে যাওয়ার জন্য ভালো অপশন

বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন বর্তমান সময়ে প্রায় সবারই থাকে।
কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে দরকার বাস্তব পথ, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং সঠিক তথ্য।আজকের দিনে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এসব নাম যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, সাধারণ পরিবারের মানুষের পক্ষে এই দেশগুলোতে যাওয়া মানে বছরের পর বছর অপেক্ষা করা এবং লাখ লাখ টাকা খরচ করা।

এমন সময়, ভিয়েতনাম হতে পারে একটি বাস্তব সম্ভাবনা! এটি এমন একটি দেশ, যেখানে কাজের সুযোগ বাড়ছে, সরকার বৈধ শ্রমিক নিচ্ছে এবং বাংলাদেশিদের চাহিদা বাড়ছে।

১. ভিয়েতনাম ভবিষ্যতে এশিয়ার একটি কেন্দ্র

গত কয়েক বছরে ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এমন একটি অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে বহু আন্তর্জাতিক কোম্পানি চীন থেকে তাদের কারখানা সরিয়ে এখানে বসিয়েছে। Samsung, LG, Apple এর মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানির পার্টস অ্যাসেম্বলি এখানেই হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এখানে কাজের ঘাটতি হবে না।

২. জলবায়ু ও পরিবেশ অনেকটাই বাংলাদেশের মতো

একটি নতুন দেশে গিয়ে মানিয়ে নেওয়া অনেকের পক্ষে কঠিন হয়। কিন্তু ভিয়েতনামের আবহাওয়া, খাবার, প্রকৃতি অনেকটাই আমাদের দেশের মতো। তাই মানিয়ে নিতে বেশি সময় লাগে না।

৩. কাজের পরিবেশ শান্ত, নিরাপদ

ভিয়েতনামে কাজের সময় ঠিক থাকে। ওভারটাইম পাওয়া যায়। আর বস বা সুপারভাইজাররা তুলনামূলকভাবে সম্মানজনক ব্যবহার করে। এশিয়ার অন্যান্য দেশে যেটা অনেক সময় ভিন্ন রকম হয়।

৪. খরচ কম আয় বেশি

বহু কোম্পানি কর্মীদের জন্য থাকা খাওয়ার সুবিধা দেয় ফ্রি। এর মানে ইনকামের পুরোটা আপনার হাতে থাকে। অন্যদিকে, ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ায় গেলে একটা রুম ভাড়াতেই চলে যায় আয় এর অর্ধেক।

৫. সহজ ভিসা প্রসেস, অযথা দৌড়ঝাঁপ নেই

ভিয়েতনাম ওয়ার্ক পারমিট ভিসা একটি স্পষ্ট ও সহজ প্রক্রিয়া। যেখানে আপনার পাসপোর্ট,জাতীয় পরিচয়পত্র,পুলিশ ক্লিয়ারেন্স থাকলে সর্বোচ্চ ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে চলে যেতে পারবেন। এখানে লটারি বা স্পন্সর জটিলতা নেই।

আরো পড়ুন : বাংলাদেশ থেকে ফিজিতে যাওয়ার উপায়

ভিয়েতনাম ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কী?

ভিয়েতনাম ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হলো একটি সরকারি অনুমতিপত্র, যার মাধ্যমে কোনো বিদেশি নাগরিক ভিয়েতনামের নির্দিষ্ট কোম্পানিতে বৈধভাবে চাকরি করতে পারেন। এটি তখনই ইস্যু হয়, যখন কোনও কোম্পানি আপনাকে কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিতে চায় এবং সেই কোম্পানির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আপনার জন্য আবেদন করা হয়।

এই ভিসার মাধ্যমে আপনি বৈধ কর্মী হিসেবে কাজ, বেতন, থাকা–খাওয়ার সুবিধা এবং অন্যান্য শ্রমিক অধিকারও ভোগ করতে পারবেন। এটি ভিয়েতনামে নিরাপদ, নিশ্চিন্ত এবং দীর্ঘমেয়াদিভাবে কাজ করার একটি স্বীকৃত।

বিজনেস টু ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কী?

ভিয়েতনামে সরাসরি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া অনেক সময় একটু জটিল হতে পারে, কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে ভিয়েতনামের এখনও সরকারি পর্যায়ে (G2G) কোনও ওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট নেই।এজন্য তারা সাধারণত প্রথমে বিজনেস ভিসায় ডাকে এবং পরে কাজের চুক্তি অনুযায়ী ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রূপান্তর করে।

এই পদ্ধতিকে বলা হয় বিজনেস টু ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেস। এটি এখন একটি পরিচিত ও কার্যকর উপায়, যেখানে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে বৈধভাবে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়া যায়।

এতে ক্লায়েন্টদের আলাদা করে কোনো দৌড়ঝাঁপ করতে হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানি বা অভিজ্ঞ এজেন্সি নিজেই পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করে ,যেমন কাগজপত্র প্রস্তুত, অনুমোদন সংগ্রহ, এবং ভিসা রূপান্তর পর্যন্ত সব কিছু। ফলে একজন কর্মী নিশ্চিন্তে এবং স্বচ্ছ নিয়মে ভিয়েতনামে স্থায়ীভাবে কাজের সুযোগ পান।

ভিয়েতনামে কী ধরনের কাজ পাওয়া যায়?

ভিয়েতনাম বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। দেশটির বিভিন্ন শিল্পখাতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজেক্ট, ফ্যাক্টরি, হোটেল ও নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে। এই জন্য তৈরি হয়েছে বিশালসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ বিশেষ করে দক্ষ এবং পরিশ্রমী দের জন্য।

বর্তমানে বিজনেস টু ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য নিয়োগ চলছে, যেমন:

  • অ্যাসফল্টার
  • কংক্রিট মিক্সারম্যান
  • স্ক্যাফোল্ডার
  • ইলেকট্রিশিয়ান
  • শাটারিং কার্পেন্টার
  • মেসন
  • স্টিল ফিক্সার
  • পেইন্টার
  • টাইলসম্যান
  • পাইপফিটার
  • ওয়েল্ডার
  • কম্পিউটার অপারেটর

সব কাজের ক্ষেত্রে সাধারণত বয়সসীমা ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হতে হয়। অধিকাংশ কোম্পানি থাকার ব্যবস্থা দেয়, তবে খাওয়ার খরচ সাধারণত নিজ দায়িত্বে বহন করতে হয়।

বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যেই অনেকেই এসব সেক্টরে কাজ করছেন এবং নতুন নিয়োগও চলমান। আগ্রহী হলে নির্ভরযোগ্য উৎস বা অভিজ্ঞ এজেন্সির মাধ্যমে বিস্তারিত জেনে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে।

বিজনেস টু ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়ায় এই পদ গুলোর বেতন কেমন?

  • ভিয়েতনামে এই পদের জন্য যারা যাচ্ছেন, তাদের জন্য শুরুতেই থাকে ৬ মাসের একটি ট্রেনিং পিরিয়ড। এই সময়ে প্রতিটি কর্মী মাসিক ৩৫০ মার্কিন ডলার বেতন পান, এবং ওভারটাইম (OT) সুবিধা।
  • প্রতিদিনের বেসিক ডিউটি সময় ৮ ঘণ্টা, তবে কেউ যদি ৮ ঘণ্টার পর অতিরিক্ত সময় কাজ করেন, সেই সময়ের জন্যও ওভারটাইম বেতন ১.৫ গুণ হারে দেয়া হয়।
  • ট্রেনিং চলাকালীন প্রতি সপ্তাহে ১ দিন ছুটি থাকে, কিন্তু কেউ যদি সেই ছুটির দিনেও কাজ করেন, তাহলে সে দিনের বেতনও ১.৫ গুণ (দেড় গুণ) হিসেবে গণনা হয়।
  • ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর শুরু হয় প্রফেশনাল পিরিয়ড, যেখানে কর্মীর দক্ষতা ও কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে মূল বেতন নির্ধারণ হয়। এই সময় বেতন শুরু হয় ৫০০ ডলার থেকে এবং দক্ষতা থাকলে তা ৮০০ থেকে ১০০০ ডলার বা তারও বেশি হতে পারে।
  • এছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অন্যান্য অনেক দেশে কাজ না থাকলে বেতন দেয়া হয়না । কিন্তু ভিয়েতনামে, কাজ থাকুক বা না থাকুক, কর্মী তার নির্ধারিত বেতন ঠিকই পান। এটা কর্মীদের জন্য একটি ভালো অপশন।

সব মিলিয়ে ভিয়েতনামে একজন কর্মীর জন্য ট্রেনিংসহ কাজ শেখার সুযোগ, নির্ভরযোগ্য ইনকাম এবং দীর্ঘমেয়াদী ভালো আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়।

যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভিয়েতনাম ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও কাগজপত্র অবশ্যই প্রয়োজন। নিচে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ধাপে ধাপে দেওয়া হলো:

যোগ্যতা:
  • বয়স: ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে
  • শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে
  • নির্দিষ্ট পদের জন্য প্রাথমিক দক্ষতা
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
  • পাসপোর্ট (কমপক্ষে ২ বছরের মেয়াদ থাকতে হবে)
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • জাতীয় পরিচয়পত্র
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট

উপসংহার

আমরা যারা সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছি , তাদের জীবনে বড় কিছু করতে চাইলে সুযোগের অপেক্ষায় নয় সঠিক সিদ্ধান্তের পথেই হাঁটতে হয়। আজ আপনি এই লেখাটা পড়ছেন মানে, মনে মনে আপনি কিছু একটা বদলাতে চাইছেন।

ভিয়েতনাম এই দেশটা হয়তো ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়া নয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই দেশেই আজ হাজারো বাংলাদেশি সম্মানের সঙ্গে কাজ করছে, পরিবার চালাচ্ছে, ভবিষ্যৎ গড়ছে। সবচেয়ে বড় কথা, তারা কেউ প্রতারণার শিকার হয়নি, বছরের পর বছর দৌড়ায়নি।

এই আর্টিকেলের প্রতিটি লাইনেই আমরা চেষ্টা করেছি সত্য দেখাতে, এবং আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে। কারণ আমরা বিশ্বাস করি আপনি যখন সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেন, তখন ভবিষ্যৎও আপনাকে সম্মান করে। আপনি এই লেখায় যদি নিজেকে খুঁজে পান, সত্যিই চাচ্ছেন পরিবারের জন্য কিছু করতে তাহলে এখনই সময়, নিজেকে নিয়ে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

ভিয়েতনাম আপনার জন্য হতে পারে জীবনের নতুন গন্তব্য । আমরা MH Travels সেই দরজায় কেবল আলো জ্বালাতে চাই।

রিলেটেড আর্টিকেল : কাতার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

প্রশ্নোত্তর

ভিসা প্রসেসে মোট কত দিন লাগে?

বিজনেস টু ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেস সাধারণত ৪৫-৬০ দিন যদি কাগজপত্র ঠিক থাকে এবং কোনো জটিলতা না থাকে।

ভিয়েতনামে যাওয়ার মোট খরচ কত?

খরচ নির্ভর করে নির্দিষ্ট পদের উপর ও কোম্পানির চুক্তির ধরন অনুযায়ী। তবে তুলনামূলকভাবে ভিয়েতনামে যাওয়ার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম এবং সহজে আয় দিয়ে কাভার করা সম্ভব।

ট্রেনিং পিরিয়ডে বেতন কেমন হয়

প্রথম ৬ মাস ট্রেনিং পিরিয়ডে মাসিক বেতন থাকে ৩৫০ ডলার + ওভারটাইম (OT)। এরপর দক্ষতা অনুযায়ী মূল বেতন শুরু হয় ৫০০ ডলার থেকে, যা বেড়ে ৮০০–১০০০ ডলার বা তার বেশি হতে পারে।

ভিয়েতনামে থাকা ও খাওয়ার ব্যাবস্থা কে করে?

বেশিরভাগ কোম্পানি কর্মীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা ফ্রি দেয়। খাওয়ার ব্যয় অনেক সময় নিজের উপর নির্ভর করে, তবে অনেক কোম্পানি সাবসিডি বা হোস্টেল রান্নার সুযোগ দিয়ে থাকে।

যদি কাজ না থাকে, তখনও কি বেতন পাওয়া যাবে?

হ্যাঁ। ভিয়েতনামের অনেক কোম্পানিতে চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দেওয়া হয় যার মানে, কাজ থাকুক বা না থাকুক বেতন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরিশোধ করা হয়। এটি একটি বড় সুবিধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *